গাজীপুর প্রতিনিধি : “ডিমে আছে প্রোটিন—খেতে হবে প্রতিদিন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো গাজীপুরেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালে গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কক্ষে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নারগিস খানম।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লিপি রাণী বসাকের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শাহীন মিয়া।
আরও বক্তব্য রাখেন জেলা ট্রেনিং অফিসার ডাঃ সেলিমুল্লাহ, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র গাজীপুরের উপপরিচালক মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদ, ভেটেরিনারী অফিসার ডাঃ আলমগীর হোসেন, কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতিকুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আশরাফ হোসেন, কালিয়াকৈর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদুল হাসান, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, খামারী মাসুদুল কবির মোনায়েম, খামারী আসাদুল আলম সরকার প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, “ডিমে আছে প্রোটিন, খেতে হবে প্রতিদিন” প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। ডিম পুষ্টিগুণে ভরা এক অসাধারণ খাবার। সারা বিশ্বে পুষ্টির ঘাটতি মোকাবিলায় ডিমকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এ দিনটি পালিত হয়।
ডিম সুস্বাদু আর সহজলভ্য এক খাবার। হাতের তালুর সমান এই ছোট এই খাবারে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ১৩টি পুষ্টিগুণ। ডিম সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে অন্যতম। ডিমকে বলা হয় ‘গরিবের প্রোটিন’। আবার টেকসই প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে এর স্থান সবার ওপরে।
তিনি ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে বলেন, ডিমের বহুমুখী গুণের জন্য এটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ডিমে যেসব পুষ্টিগুণ থাকে, তা সাধারণত অন্যান্য খাবারে খুব কমই থাকে। তাই সুষম ডায়েটের জন্য ডিম একটি অসাধারণ খাবার। এটি গর্ভবতী মা, শিশু, কিশোর এবং বয়স্কদের জন্যে অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ডিমে ৯ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে প্রোটিনের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ডিমের প্রোটিন পেশি তৈরি করতে, ক্ষুধা নিবারণ করতে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সাধারণত আয়রন এবং ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, ডির ঘাটতি দেখা যায় বিশ্বজুড়ে। ডিমের মধ্যে এসব পুষ্টিগুণ উপস্থিত থাকে। ডিমের এ পুষ্টিগুণ আমাদের প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। শারীরিক বৃদ্ধি ঘটায়। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে।
ডিম সেলেনিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এতে রয়েছে দস্তা, লোহা এবং তামার মতো নানা প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। এগুলো বিশেষত কোলিনের উত্স হিসেবে পরিচিত, যা মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে ও স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ১টি বেনসন সিগারেটের মূল্য ২০ টাকা, হাফ লিটার ১ বোতল পানি ২০ টাকা আর ১ টি ডিমের মূল্য ১২/১৩ টাকা। সিগারেট আমাদের জন্য ক্ষতিকর। পানি দরকারী হলেও ডিমের যে পুষ্টিমান তুলনা করলে ডিম অনেক সহজলভ্য পুষ্টি যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তাই প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে।
তিনি, এন্টিবায়োটিক মুক্ত নিরাপদ ডিম মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে খামারী ও পোল্ট্রি এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দদের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নারগিস খানম বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে হলে বাইরের এবং হোটেলের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন একটি করে ডিম ও এক গ্লাস দুধ খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, সচেতনতা বাড়াতে এবং পুষ্টির গুরুত্ব বোঝাতে এ ধরনের দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় মানুষের মাঝে পুষ্টি বিষয়ে আরও কার্যকর প্রচার চালানো দরকার।
আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।