স্টাফ রিপোর্টার: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ফেব্রুয়ারিতে না হলে দেশ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম। শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ ও পার্ক নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীতে মানববন্ধনে তিনি এই কথা বলেন।
ব্যারিস্টার অসীম বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিবে, স্বাভাবিকভাবে ছয় মাস হলেও হতে পারত। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও নির্বাচন হচ্ছে না। বরং সংস্কার ও ঐকমত্যের নামে কালক্ষেপণ চলছে। এতে জনগণের কাঙ্ক্ষিত ভোটাধিকার এখনো ফেরত আসেনি। তাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি রাজপথে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা। পতিত স্বৈরাচারের সময় দায়িত্বে থাকা বা পদলেহনকারী কাউকে যেন নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে রাখা না হয়। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্রণীত রূপকল্প-২০৩০ এবং বিএনপির ২৭ দফা কর্মসূচি ও পরবর্তীতে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তিতে ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কার্যকর হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি একসাথে না বসে সমাধান বের না করে, তবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
ব্যারিস্টার অসীম বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কাজ করেছেন। তারেক রহমানও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ঘুরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ উপলব্ধি করেছেন এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, যার ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
ব্যারিস্টার অসীম বলেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না হওয়ায় নাগরিকরা ভোগান্তিতে আছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধির পরিবর্তে প্রশাসক বসানো হচ্ছে, যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, ফুটপাতে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, ফলে সাধারণ মানুষ যেমন ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে না, তেমনি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “হকার উচ্ছেদ নয়, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
ঢাকার জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একেকবার একেক সংস্থা রাস্তা খোঁড়ে। সমন্বয়ের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি থেকে শুরু করে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সেজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার অসীম বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাজধানীর অনেক খেলার মাঠ দলীয় গোষ্ঠীর নামে বরাদ্দ দিয়ে দখল করা হয়েছিল। ব্যাংক লুট, ক্যাসিনো ব্যাবসার মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় কিছু মাঠে শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে শিশুদের জন্য মাঠ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
এ সময় কলাবাগান থানা বিএনপির আহ্বায়ক খালেক কিবরিয়া লাকি, নিউ মার্কেট থানা আহ্বায়ক লায়ন এস এম মতিউর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন টিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহীদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।