স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করাতে পারে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, সংকট সমাধানে আজই সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টা) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা শুরুর আট বছর পার হলেও তাদের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক সহায়তাও মারাত্মক ঘাটতির মুখে। সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুতে মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এটিই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার অজুহাতে এটি জিম্মি করা চলবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সহায়তা কমতে থাকায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা। আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার চেয়ে এতে অনেক কম সম্পদ প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা সবসময়ই নিজ দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে যারা সাম্প্রতিক সংঘাত এড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ এই সংকটের শিকার। আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিরাট খরচ বহন করতে হচ্ছে আমাদের। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক প্রবাহসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে।
দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের মতো উন্নয়ন-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনা, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করা এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা। রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় করা এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় টেকসই সংহতকরণের জন্য আস্থা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার পূর্ণ অর্থায়নে দাতাদের অবদান নিশ্চিত করা, দায়বদ্ধতা ও পুনরুদ্ধারমূলক বিচার নিশ্চিত করা, মাদক সংক্রান্ত অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা করা।