গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। মুক্তিপণ আদায় করে প্রায় চার ঘন্টা পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই কর্মকর্তাকে জঙ্গলে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। বুধবার সন্ধ্যার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর উত্তর পাশের (পল্লী বিদ্যুৎ) মোড় থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃতের স্বজনরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা শাখার জেনারেল ব্যাংকিং ইনচার্জ এবং ফাস্ট এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফএভিপি) হিসেবে কর্মরত আছেন মোকসেদ আলী (৫৮)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা (পালের মাঠ) এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বুধবার অফিস ছুটির পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফেরার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর উত্তর পাশে (পল্লী বিদ্যুৎ) মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তার সাথে আরো দুইজন দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন সালনা এবং একজন চান্দনা চৌরাস্তা যাবে বলে জানায়। প্রায় ২০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো যানবাহন আসছিল না। এসময় সাদা একটি প্রাইভেটকার তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওই প্রাইভেটকারে আগে থেকেই চালকের সাথে একজন বসা ছিল। তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দুইজন প্রাইভেটকার চালকের সাথে কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করে।
তারা জানান, ভাড়া নির্ধারণ শেষে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ওই দুইজন প্রাইভেটকারে উঠে পেছনের সিটে বসেন। ব্যাংক কর্মকর্তা মাঝখানে এবং অপর দুই যাত্রী তার দুই পাশে বসেন। প্রাইভেটকারটি উড়াল সেতুর উপর দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তার দিকে ছেড়ে আসে। পথে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকা পার হওয়ার পর হঠাৎ তার সাথে থাকা দুই যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলীর চোখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা গাড়ির ভেতর ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে অপহরণকারীরা মোকসেদ আলীর মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি বিকাশ নাম্বার দেয়। মুক্তিপণের টাকা ২০ মিনিটের মধ্যে না পাঠালে তার স্বামীর হাত-পা কেটে ফেলবে অথবা তাকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দিবে বলে অপহরণকারীরা জানায়। স্বামীকে বাঁচাতে তিনি অপহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠান। পরে অবশিষ্ট টাকার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকলে তিনি (স্ত্রী) আরো ৩০ হাজার টাকা একই বিকাশ নাম্বারে পাঠান। এরপর বিভিন্ন পথ ঘুরে প্রায় চার ঘন্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলীকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডষ্টোর এলাকার একটি জঙ্গলে ফেলে রেখে যায়। পরে সেখান থেকে মধ্যরাতে বাসায় ফিরেন তিনি।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ জানান, এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ওই মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যাত্রী বহনের নামে একই কায়দায় একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহরণকারীরা মারধর করে অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয় বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানান।