মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলা নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চারুকলা অনুষদের ডিন ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল।

ডিন বলেন, এবারের বৈশাখ হবে সবার। আমাদের ভূখণ্ডে বসবাসরত সব জাতি-গোষ্ঠী বৈশাখ বরণে অংশীদারিত্ব অর্জন করেছে। পাহাড় থেকে সমতল- সবাই একসঙ্গে বর্ষবরণ উদযাপন করবে। এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে একপেশে আয়োজনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের উদার, শুদ্ধচর্চার সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হতে পারব বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাপক এ আয়োজনের লক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এর ছায়াতলে দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটবে। প্রতিফলিত হবে সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ফুটে উঠবে শোভাযাত্রার প্রকৃত আনন্দ।

মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম কেন পরিবর্তন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ১৯৮৯ সালে যখন এ বর্ষবরণ কর্মসূচি পালন শুরু হয়, তখন এটির নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তীতে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিবর্তিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে যে আয়োজন হয়েছিল সেটির স্বতঃস্ফূর্ততা কী রকম ছিল এটি বিশ্লেষণের বিষয়। পরবর্তীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম হওয়ার পর কী ঘটেছে সেটিও আমাদের সবার জানা। সেজন্য এটিকে আমরা পরিবর্তন বলছি না, আমরা বলছি আগের নামটি আমরা পুনরুদ্ধার করেছি।

চারুকলার ডিন আজহারুল বলেন, প্রতি বছর এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলের ব্যানারে বিতর্ক কম ছিল না। বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষ কোন ব্যানারের নিচে দাঁড়াবে, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা প্রাণে-প্রাণে বর্ষকে বরণ করব- সেটিই মূল বিবেচ্য বিষয়।

মঙ্গল শব্দে শব্দগত কোনো ত্রুটি দেখছেন না বলে জানান ডিন ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা এ মঙ্গল নামটিকে এমনভাবে ব্যবহার করেছে বা চর্চায় নিয়ে এসেছে, যা নিয়ে যথেষ্ট ব্যাড ফিলিংস (খারাপ অনুভূতি) কাজ করছে সমাজে থাকা বিভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে। তাই আমরা আগের নামটিতে ফিরে যেতে চাই, যেখানে সব মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল।

এ বিষয়ে শোভাযাত্রা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক কাউসার হাসান টগর বলেন, ১৯৮৯ সালে এটি আনন্দ শোভাযাত্রা ছিল। আমরা সেটিতে অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে ছিল সব মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ১৯৯৬ সালে হঠাৎ এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, মঙ্গল নামে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা ব্যাখ্যা চাই, আনন্দের সমস্যা কোথায় ছিল? এতে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমরা মঙ্গল-ই মেনে নেব। কিন্তু আনন্দ কেন বাদ দেয়া হল, সে ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই।