স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরে বেতন-ভাতা পরিশোধ ও বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা মহাসড়ক অবরোধ ও বেশকয়েকটি গাড়ি ভাংচুরও করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি কারখানার গুদামে অগ্নিসংযোগ করে।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। ওইসব কারখানার শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনভাতা পাওনা রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা দিলেও পরিশোধ করা হয়নি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মঙ্গলবার পরিশোধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশোধ না করায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে তারা। পরদিন বুধবার সকালে শ্রমিকরা পার্কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা পার্কের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ। এসময় শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আশেপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনে। তারা পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর এলাকার বিগবস কর্পোরেশন লিমিটেড এর এপটেক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে। এসময় ওই কারখানার শ্রমিকরা বাঁধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষকালে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিগবস কারখানার ফেব্রিক্স ও ঝুটের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাঁধা দেয় এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাংচুর করে। শ্রমিক বিক্ষোভর মুখে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ফিরে যায়। ইতোমধ্যে আগুন ফেব্রিক্স ও ঝুটের গুদামের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে পাশের কেমিক্যাল গুদামে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। বিকেল পর্যন্ত আগুন নেভানোর কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এ রিপোর্ট লেখা (সন্ধ্যা ৬টায়) পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল জানান জিএমপি’র কোনাবাড়ি জোনের সহকারি কমিশনার সুবীর কুমার সাহা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাকের্র কারখানাগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েকদিন যাবত শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন দাবি জানিয়ে আসছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বেতন যায়নি। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে একই দাবিতে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ করে। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বলছে তারা বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সময়ই দিচ্ছে না। শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তবে আশা করা যাচ্ছে আজকের মধ্যেই সকলের বেতন পরিশোধ করবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার লক্ষ্মীপুরা এলাকার আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা এবং ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও কারখানা গেইটের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছে।