হাফিজ ছিদ্দিকী : ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আমেরিকায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যস্থ সময় পার করছেন। নানা বক্তব্য ও সাক্ষ্যাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। একজন নির্ভিক সৎ ও স্পষ্ট বাদি জনাব তাহের জামায়াতের রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি আঞ্চলিক সম্পর্কিত বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেন। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের স্বকীয়তা ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সহনশীলতা জুজুর ভয়কে উড়িয়ে দেন। তবে কোনো অপশক্তির ষড়যন্ত্র রক্তচক্ষুর বিষয়ে নিজেদের শক্তি ও কৌশলগত ব্যাখ্যা করেন। বিগত ৫৪ বছরে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা রাষ্ট নায়ক যাহা পারেনাই। কুটনৈতিক দায়িত্ব পালনে পশ্চিমা দেশগুলোর চাওয়া পাওয়ার ব্যাখ্যায় তারা জামায়াতে ইসলামীকে একটি মডার্ন ইসলামী শাসনতন্ত্রের রুপরেখা সন্তোষজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। ফলে আমেরিকা সহ পশ্চিমা দুনিয়ায় জামায়াতের ক্ষমতায়নকে উৎসাহ ব্যান্জক মনোভাব দেখিয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্রের লিপ্ত তাঁদের মোকাবেলায় জামায়াতে ইসলামী সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর। সেটা পাহাড়ে বা সমতলে। তা বিদেশী ইন্ধনে হউক অথবা দেশীয় ষড়যন্ত্র। দেশ রক্ষার লড়াইয়ে অবতীর্ণ জামায়াতে ইসলামী দায়বদ্ধ তবে কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসেনা। পার্বত্যাঞ্চল আমাদের দেশের ভূখণ্ড সুতরাং এখানে দূর্বলতার কোনো অবকাশ নেই।
তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন জামায়াত যদি ক্ষমতা পায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যাকাত ফান্ডের অর্থ কালেকশান করে দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এর প্রেক্ষিতে মুর্খ্য সমালোচকদের নাকি লজ্জায় মাথা হেট হয়েছে। আমরা কি ভিক্ষুক যে মধ্যপ্রাচ্যের জাকাত খেতে হবে।
অথচ জাকাত আল্লাহর দেওয়া ইসলামিক অর্থনীতি যা সামাজে বৈষম্যের মুলে আঘাত করে। আমার ৩৫ বছরের চোখে দেখা অভিজ্ঞতায় একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যতটুকু জেনেছি। সৌদি আরবের প্রতিটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির লাইসেন্স নবায়নের প্রধান শর্ত হলো জাকাত পরিশোধের রশিদ জমা দিতে হয়। এমনকি ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের মুলধনের সার্টিফিকেট পেশ করেই ঐ অর্থবছরের লাভ নোকসানের ভিত্তিতে লাইসেন্স রিনিউ অনুমোদন করা হয়। আর কেউ ডিপোল্টার হলে তিন ধরনের সংকেত যথাক্রমে লাল হলুদ গ্রীন সিগনাল দেখায়। এরপর সমাজের নারী পুরুষ নির্বিশেষে তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সেই টাকা গরীব অসহায় ও মুখাপেক্ষীদের দান করা হয়।
আমাদের দেশের জন্ম থেকে বিদেশী এনজিও যারা গরীবদের মাঝে কাজ করে সেই চ্যারিটেবল হলো জাকাতের মতোই। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলো সেই টাকা আত্বসাত করে ধনি শ্রেনীর লোকেরা। গ্রামের মেম্বার চেয়ারম্যান এমপি মন্ত্রী সবাইর পেটে এই টাকা হজম হয়।
এবার আসি আমাদের দেশীয় ধনিরা সবাই জাকাত প্রদান করেনা। সামান্য অংশ করলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিত শাড়ী লুংগি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে, এতে ৯০% লোকের জাকাত শুদ্ধ হয়না। অথচ ইসলামের পাঁচটি মৌলিক দাবির নামাজের পরেই এই জাকাতের স্থান। মহান আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজেকের উদ্বৃত্ত এক চল্লিশ অংশ আদায় করে অভাবীদের স্বাবলম্বি করাই হলো জাকাতের মৌলিক উদ্দেশ্য। প্রতিটি শহরে নগরে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জাকাত রাষ্ট্রীয় ভাবে পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হলে নানান জরিপে দেখা গেছে ১০ বছরে দারিদ্রতা দুর হওয়ার কথা। আমরা আল্লাহর আইন না জানা ও না মানার কারনে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী দরিদ্র সীমায় রয়েছে। অথচ আমাদের মনের অজান্তেই নিকৃষ্টতম ভিক্ষার টাকা আমরা পকেটে লুকাই।
তাই আমাদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচিৎ ইসলামের মৌলিক বিধান জানা ও বুঝার। অনর্থক সমালোচনার কারনেই আমরা পিছিয়ে পড়া জাতি বিদেশীদের রিলিফের টাকার জন্য হাত পারলেও লজ্জা লাগেনা। আমরা সার্বজনীন ভাবে আহ্বান করবো ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুধাবন করা। ঐতিহাসিক ভাবে বৃটিশ আমলেই এই মাটিকে বিদেশীরা সোনার বাংলা খেতাব দিলেও আমাদের কর্মদোষে আমরা আজ ভিক্ষুকের জাতি। আল্লাহ পাক সবাইকে ইসলামের পরিপূর্ণতা জানার ও বুঝার তৌফিক দান করুন, আমীন।
( হাফিজ ছিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও উপ-সম্পাদক, ঢাকা গ্যাজেট)