হাফিজ ছিদ্দিকী: নূরুল হক নূরের উপর হামলার এই নেক্কারজনক ঘটনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত। একক কোনো দলের আহ্বানে জুলাই বিপ্লব হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের জুলুম নিপিড়ন গুম খুন ভোটাধিকার হরন লুটপাট দেশকে দলীয়করন করে প্রশাষন ও বিভিন্ন বাহিনীকে চাকর বানিয়ে তাদের সরকারের ষোলকলা পূর্ণ করেছিলো। আর রাজনৈতিক মাঠে ডামি খেলোয়াড় ছিলো তথাকথিত বিরোধীদল কুখ্যাত জাতীয় পার্টি। লাঞ্চিত বঞ্চিত মাজলুম জনগন ফুঁসে উঠেছিলো একটি বিপ্লবী ডাকের প্রতিক্ষায়। এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য দলের প্রতিবাদ মিটিং মিছিল মহাসমাবেশ সবই হয়েছে। দস্যু দখলদার ফ্যাসিস্টের বেষ্টনী ভেদ করার সাধ্য কারোই ছিলোনা। অসহায় জনগন ধরেই নিয়েছে ২০৪১ সালের আগে হাসিনা ও জগদ্দল পাথরকে সরানো যাবেনা। তাই রাজনৈতিক দলগুলো দায়সারাভাবে নিজেদের ধরে রেখেছিলো।
বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের বেষ্টনী, জামায়াতে ইসলামীর অফিসগুলো তালা দেয়া, আলেম ওলামা চৌদ্দ সিকে বন্দি। পথেরকাঁটা সরানো হলো শাপলায় গন-হত্যা, ৫৯ জন চৌকশ আর্মি অফিসার তথা বিডিআর ম্যাসাকার, জামায়াত নেতাদের জুডিশিয়াল হত্যার আয়োজন, খালেদা জিয়া বাড়ী ছাড়া হয়ে জেলে বসবাস, কোকোর হত্যা, তারেককে কোমর ভেঙে নির্বাসনে। প্রতিবাদী দের জেল গুম খুন হত্যা ও আয়নাঘরে আটক করে নির্মমতার নিঃলজ্ব উদাহরন। কতিপয় মাদ্রাসার তরুনদের উঠিয়ে এনে বন্দি করে নির্জনে আটক রেখে জংগি নাটক সাজিয়ে অবশেষে বন্দুকযুদ্ধের কল্পকাহিনী। ভারতের পরামর্শে বিশ্বকে জানান দেয়া হলো বাংলাদেশ মৌলবাদী সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্য। ফলে শেখ হাছিনা পশ্চিমাদের কাছে এক মহান লেডি সরকার প্রধান।
২০২৪ সালের শুরুতেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূচনা। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি ধীরে ধীরে জাতীয় পর্য্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক চাটুকার উচ্ছিষ্টভোগী জাতীয় পার্টি ও চৌদ্দ দল সমান্তরালে এই দস্যু সরকারের পরামর্শদাতা। ৩৫ বছরের মধ্য বয়সী মানুষ নির্বাচনের প্রকৃত চেহারা দেখতে পেলোনা। গন-প্রজাতন্ত্রিক দেশ হয়ে গেলো শেখতন্ত্রের বাংলাদেশ। জনগনের অবস্থা হয়ে গেলো মায়ানমারের রহিংগা।
এমতাবস্থায় তরুন ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনে হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর নারীর প্রতি নির্মম আচরণ। বিভিন্ন স্থানে ছাত্র হত্যা করে লাশ গুম করা। আকাশ পথে হেলিকপ্টারে থেকে গুলি করে নারী শিশু সহ সকল ওয়েপন ব্যাবহার করে সম্মিলিত বাহিনী। সারাদেশ ফুঁসে উঠলো ফলে প্রতিটি নাগরিক আপন সন্তানদের নিয়ে ময়দানে নেমে গেলো। সারাদেশ হয়ে গেল কোটি মানুষের রাজপথ। বিএনপি জামায়াত শিবিরের সহ সমমনা দলের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের বিপরীতে দুই স্বৈরাচার ও তাদের বাম দালাল শক্তির ১৪ দল অবস্থান নিলো। শেখ হাসিনা ও তার প্রথম সারির লুটেরা খুনিরা পালিয়ে গেলেও সহি সালামতে দেশে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তার দোসররা। এর অন্যতম হলো ৮০ দশকের স্বৈরাচার এরশাদের দল জাপা।
বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পরেই অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা হলো জাতির আকাংখ্যা নিয়ে। কাদের ইশারায় কারা সরকারে বসলো আর কোথায় সেই বিপ্লবের নায়কেরা সব ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিলো। সর্ষের মাঝেই ভূতের বসবাস চলমান সেই শুরু থেকেই। সেনাবাহিনীর উদ্বতন কুশিলব, বাকশালী আমলা, গোপালী পুলিশ, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী সহ সবাই যেই লাউ সেই কদু।
হাসিনার পলায়নের পরেই স্বৈরাচারের দোসর জি এম কাদের দিল্লিতে গিয়ে ফিরে এসে সাংবাদিকদের জানালো খোলামেলা আলোচনা হয়েছে দিল্লিতে তবে এর বেশী বলা যাবেনা। মতান্তরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষনা সনদ, নির্বাচন সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, পি আর পদ্ধতি, প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান এই সকল মিলিয়ে বড়ো দল গুলোর মুখোমুখি অবস্থান। দীর্ঘ একটি বছর পেয়েও ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার কোনো সেক্টরে নতুন নিয়োগ দানে ব্যার্থতার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিএনপি যতোই মাতম করুক হাসিনার সাজানো প্রশাসনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া পাগলামী ছাড়া আর কিছুই না।
বিলীন হয়ে যাওয়া এক শতাংশের দলের খেলা গতকাল দেশবাসী প্রত্যক্ষ করলো। প্রশাসন তথা পুলিশ আর্মির মারমুখী আচরণ ভিপি নুরের রক্তাক্ত দেহ ও তার দলের জনশক্তির অসহায়ত্ব দেখে বলছি দেশ এখনো ভারতের “র” ও হাসিনার দখলে। বিপ্লবীরা মাইর খাবে ফাঁসিতে ঝুলবে এমনকি সকল বিরোধী দলের জন্য গতকালের এই ম্যাসেজ। পৃথিবীর বিপ্লবের নায়কেরা তাৎক্ষণিক ক্ষমতায় না বসে তাঁদের লোকবল সিলেকশান করে সকল ফরমান জারি করে। তখন কোনো সংবিধানের মুল্য থাকেনা। সংসদ নেই সংবিধান মুলতবির ফলে অন্তবর্তীকালীন সরকার রুল জারি করে জনগনকে সংবিধান উপহার দেবে। এটাই সারা পৃথিবীতে ঘটেছে এটাই ইতিহাসের অমর সত্য ঘটনা। আমাদের তথাকথিত লোভী বিপ্লবীরা সামান্য দুইটি মন্ত্রনালয়ের লোভ সামলাতে না পেরে হোশঁ হারিয়ে ফেলে।
সুতরাং আগামী দিনে সব রাজনৈতিক দল ও জনগন কাফফারা দেয়ার জন্য তৈরী থাকুন নতুবা দ্রুত রাজনৈতিক গোলটেবিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিন আপনাদের আগামীর কেবলা কোনদিকে এবং করনীয় কি হবে।
লেখক: (হাফিজ ছিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা)