স্টাফ রিপোর্টার : রক্তাক্ত গাজা! আগুনে পুড়ে যাচ্ছে শিশুদের ভবিষ্যৎ, ধ্বংসের স্তূপে লুটিয়ে পড়ছে একেকটি মানবজীবন। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় মৃত্যুপুরীতে রূপ নেওয়া গাজায় যখন মানবতা নিঃশেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, তখন বিশ্বজুড়ে বিবেকবান ছাত্রসমাজ প্রতিবাদের মশাল হাতে নামছে রাজপথে, ক্লাসরুমে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) ৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারের সকল ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ স্থগিত ঘোষণা করেছে।
বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের ‘ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনথ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাউবির এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়—এটি মানবিক দায়িত্ববোধ ও বৈশ্বিক সংহতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বাউবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো: খালেকুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের অংশ হিসেবে সোমবারের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৮:৩০ টা থেকে ১০:৩০ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয়ে এবং সকাল ৯:০০ টা থেকে ১১:০০ টা পর্যন্ত আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রসমূহে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অবস্থানে শিক্ষার্থীরা প্রশংসা জানিয়ে বলছেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের কণ্ঠকে সাহস দেয়। গাজায় শিশুদের কান্না শুনে যদি আমরা নিরব থাকি, তবে আমাদের শিক্ষার মূল্য কোথায়?
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আজ আমরা শুধু শিক্ষার্থী নই, আমরা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বিবেকবান নাগরিক—আমাদের প্রতিবাদই ভবিষ্যতের ইতিহাস রচনা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, “শিক্ষা শুধু সনদ অর্জনের পথ নয়, এটি মানুষ গড়ার প্রক্রিয়া। গাজায় যা ঘটছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—সভ্যতার মুখোশ আজ ছিন্নভিন্ন। সেখানে আমাদের এই সংহতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই মানবিক অবস্থান শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নৈতিক বার্তা পাঠাবে। নিপীড়নের বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ, বিশেষত শিক্ষাঙ্গনে, কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়—এটি ভবিষ্যতের মানবিক নেতৃত্ব তৈরির বীজ বপন।
এই সময়ের পটভূমিতে বাউবির এমন একটি সাহসী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বার্তাটি পরিষ্কার—যেখানে অবিচার, সেখানেই প্রতিবাদ; যেখানে মানবতা নিপীড়িত, সেখানেই শিক্ষার সত্যিকারের ভূমিকা শুরু।