স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষা ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তা প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান মাউশিতে পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে যোগদান করেছেন । বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ তম ব্যাচের চৌকষ ও মেধাবী কর্মকর্তা প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান গত ৬ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে যোগদান করেছেন।
প্রফেসর আব্দুল হান্নান এর জন্ম খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানাধীন আন্দুলিয়া গ্রামে ১৯৬৮ সালে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে । ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক প্রফেসর আব্দুল হান্নান বর্তমানে গাজীপুর শহরের শিমুলতলীতে বসবাস করেন। তাঁর সহধর্মিনী নাছিমা খাতুন গাজীপুর টাকশালের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান ১৯৮৩ সালে যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে একই শিক্ষা বোর্ড থেকে বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৯ম স্ট্যান্ড করে এইচএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করার পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। এ বিভাগ থেকে ১৯৯০ সালে বিবিএ এবং একই বিভাগ থেকে এমবিএ পাশ করেন। পড়াশোনা শেষে ১৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালে প্রভাষক হিসেবে সরকারি কে সি কলেজে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরর্বতীতে টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজ, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে এবং ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ ও পরে অধ্যক্ষ হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে কলেজের সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কলেজের শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশ এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সকল পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে. উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও নিবিড় পরিচর্যা কমিটি করে সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ, স্নাতক (পাস) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন, ও নিবিড় পরিচর্যা কমিটি গঠন করে সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ, . স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন, ও নিবিড় পরিচর্যা কমিটি গঠন করে সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ, ছাত্র ও ছাত্রীদের হোস্টেল এর উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও খাবাবের মানোন্নয়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পাদনের জন্য কমিটি গঠন, কলেজের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ভিজিলেন্স কমিটি গঠন করে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক দক্ষতা, বাগ্মীতা, যুক্তিশীলতা, চিন্তাশীলতা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গির উন্নতির জন্য ডিবেটিং ক্লাব চালু করা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষে চাকুরি ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য একটি ক্যারিয়ার ক্লাব গঠন করে কার্যক্রম গ্রহণ করা, শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য এবং ইংরেজি লেখা ও বলার দক্ষতা অর্জনের জন্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব গঠন করা, শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্লাব চালু করা, শিক্ষার্থীদের পরিচয় সনাক্তের জন্য সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের পরিচয় পত্র সরবরাহ করা, শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া ও খেলাধুলায় উৎসাহিত করার জন্য একটি ক্রীড়া কমিটি গঠন করা এবং স্বেচ্ছা সেবী বিভিন্ন সংগঠন যেমন রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন ”বাঁধন” এর কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য আগ্রহী ও দক্ষ শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া ও নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করা।
ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা কলেজের সার্বিক নিরাপত্তা ও সৌন্দবর্ধন সাধিত হয়। তাঁর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কয়েকটি পদক্ষেপ ছিলো , কলেজ ক্যাম্পাসের খেলার মাঠের উন্নয়ন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও খাস জমি দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কলেজের শিক্ষার্থীদের পত্রিকা পড়ার সুবিধার্থে কলেজ ক্যাম্পাসে পত্রিকা স্ট্যান্ড স্থাপন করা, কলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনের জন্য দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীর উর্ধ্বমুখীকরণ ও প্রাচীরের সামনে নিচু জায়গার সৌন্দর্য বর্ধন, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, কলেজের সামনে প্রধান গেটে একটি দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা, কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ক্যান্টিন ও ’সততা স্টোর’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি আর্থিক স্বচ্ছতার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বের অধ্যক্ষ কর্তৃক চালুকৃত প্রতি কমিটি থেকে অগ্রীম ৫% টাকা অধ্যক্ষকে দেওয়ার বিধান বাতিল করা, বাই রোটেশন সকল শিক্ষককে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের নামে যথেচ্ছা অর্থ খরচ বন্ধ করা,পরীক্ষা কমিটি থেকে অডিটের নামে বিরাট অংকের টাকা অধ্যক্ষকে দেওয়ার বিধান বন্ধ করা ইত্যাদি। অধ্যাপক বিএম আব্দুল হান্নান তার ৭ মাসের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন কালে কলেজের সর্বত্রই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছিলেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে দৃশ্যমান উন্নতি সাধন করেছিলেন।
কর্মজীবনে তিনি সর্বত্রই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ’জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৮’ উপলক্ষে তিনি গাজীপুর জেলার ’শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি গাজীপুর সদর উপজেলা পর্যায়ে ’শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। কর্মজীবনে তিনি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি প্রশিক্ষণেই তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। যেমন নামেয়ে অনুষ্ঠিত অ্যাডভান্সড কোর্স অন এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট (এসএসসিইএম) প্রশিক্ষণে তিনি ’প্রথম স্থান’ অধিকার করে ’চেয়ারম্যান এ্যাওয়াডর্’ লাভ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন যা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত বই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠ্য। অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান রাচিত বইসমূহের মধ্যে রয়েছে, ১. এডভান্সড একাউন্টিং ২. বেসিক একাউন্টিং ৩. ব্যাংকিং ও বীমা ৪. ইন্টারমেডিয়েট একাউন্টিং ৫. হিসাব বিজ্ঞান নীতিমালা-১ এবং ৬. হিসাব বিজ্ঞান নীতিমালা -২ ইত্যাদি।
অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন ও শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও মত বিনিময়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে শিক্ষা সফর করেছেন। তিনি সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও ভটান সফর করেছেন। দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাবিষয়ক সেমিনার ও সেম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণ করেছেন। অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান গত ৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ডাইরেক্টর (কলেজ ও প্রশাসন) পদে যোগদান করেন।