স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরে বহুতল ভবন নির্মানে অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে হাউজিং কোম্পানী জেসমিন বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জমির মালিকের দায়ের করা মামলায় দীর্ঘ শুনানী শেষে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন সংস্কার করার নির্দেশনা দিয়েছে উচ্চ আদালত। সেইসাথে ভবন সংস্কারের সময় ফ্ল্যাট বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর প্রয়োজন হলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় বাড়ী ভাড়া পরিশোধেরও নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই হাউজিং কোম্পানীর লোকজন জমির মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা মামলা ও নানাভাবে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজীপুর শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাশবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তর ছায়াবিথী এলাকায় ১৯৯১ সালে ১০ কাঠা জায়গা কিনে বাগান বাড়ীর আদলে তিন তলা বিশিষ্ট একটি বাসা নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা। ২০১৭-১৮ সালের দিকে এ জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেন জেসমিন বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ। প্রথম অবস্থায় জমির মালিক রাজী না হলেও নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে এক পর্যায়ে তাকে রাজী করানো হয়। সেসময় হাউজিং কোম্পানী জমির মালিককে সাইনিং মানি হিসেবে এক কোটি টাকা, ৯টি ফ্ল্যাট, নীচতলায় গ্যারেজের একটি অংশ ও ছাদে একটি অফিস রুম দেওয়ার কথা বলে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তারা চুক্তিবদ্ধ হয়। সে বছরের শেষের দিকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে জেসমিন বিল্ডার্স। সেসময় ভবনটিতে ৪টি ইউনিট করার কথা থাকলেও চুক্তিপত্র চুড়ান্ত করার সময় হাউজিং কোম্পানী নকশায় ৫টি ইউনিটের অনুমোদন নেয় রাজউক থেকে। এ সময় জমির মালিক আপত্তি করলেও পরে জেসমিন বিল্ডর্সের অনুরোধে তা মেনে নেয়। হাউজিং কোম্পানী ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্ত ভবন নির্মাণে অনুমোদিত নকশা অনুসরন না করে একের পর এক নিয়ম লঙ্ঘন করতে থাকে জেসমিন বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে জমির মালিক আপত্তি জানালে কোন কর্ণপাত করেনি তারা। উল্টো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানাভাবে হয়রানী করতে থাকে। জমির মালিকের একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলে পাঠানো হয়। কয়েক মাস সে জেল খেটে ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সে জেল থেকে জামিনে বের হয় বলে জানা গেছে।
এক পর্যায়ে ভবনের নিরাপত্তা, ফ্ল্যাট বাসিন্দাদের ঝুকি ও ভবিষ্যত আইনী জটিলতার কথা চিন্তা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন জমির মালিক। তিনি অনমোদিত নকশা লঙ্ঘন ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেন জেসমিন বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ শুনানীর পর আদালত গত ২২ মে নকশা লঙ্ঘন সংক্রান্ত মামলায় (নং ১১৪/২০২৪) দীর্ঘ শুনানী শেষে চুড়ান্ত আদেশ দেন। চুড়ান্ত আদেশে হাইকোর্ট রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ছয় মাসের মধ্যে সমন্বিতভাবে ভবনটি সংশোধন করে অনুমোদিত নকশার সাথে মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেইসাথে ভবনের সংস্কার কাজ চলার সময় মামলার বাদী ও ভবনের ফ্ল্যাটে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অন্যত্র বাসা ভাড়া নিতে হলে জেসমিন বিল্ডার্সকে তা পরিশোধ করতেও নির্দেশ দেন ।
জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর রাজউক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তদন্তে এসে নানা ধরনের অনিয়মের সত্যতা খুজে পান। ইমার্জেন্সী এক্সিট না থাকা, প্রতি তলায় ভয়েটের মুখ বন্ধ, ২টি সিড়ির জায়গায় একটি সিড়ি ও সীমানা প্রাচীর নির্মানে অনিয়ম- এ বিষয়গুলি কোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেন।
এসব বিষয়ে জমির মালিক মনোয়ারা বেগম জানান, জেসমিন বিল্ডার্স শুরু থেকেই আমাদের সাথে নানা ধরনের প্রতারনার আশ্রয় নিতে থাকে। নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ভবন নির্মাণ করলে আমরা আপত্তি জানাই। এতে তারা আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করতে থাকে। আমার ছেলেকে মিথ্যা মামরা দিয়ে জেলে পাঠায়। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে নানা ধরনের হুমকী দিতে থাকে। এসব বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও সুদৃষ্টি কামনা করি । তিনি বলেন, আমাদের ভবনটি সম্পূর্ণ বৈধ ভবন হিসেবে থাকতে হবে। তারা যেসব অনিয়ম করেছেন, তা সংশোধন করতে হবে।আমাদের সাথে যা চুক্তি ছিল, তা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ভবনটি একটি সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্স ভবন হিসেবে চুড়ান্ত করতে হবে।