স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ৭৫তম জন্মদিন ছিল সোমবার । তিনি ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল গাজীপুর জেলা সদরের দক্ষিণ সালনায় জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ. মান্নান অথবা মান্নান স্যার নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। গাজীপুরের মাটি ও মানুষের নেতা অধ্যাপক এ মান্নানের শুভ জন্মদিনে তাকে নানা আয়োজনে স্মরণ করেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী ও শুভাকাংখীগণ।
এম.এ.মান্নান গাজীপুরের সালনা গ্রামে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কছিম উদ্দিন আকন। তিনি সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে জয়দেবপুর রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে ময়মনসিংহ মুসলিম হাই স্কুল থেকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পাস করেন। পরে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন ও সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন।
তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। কলেজ জীবনের শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়নে এমএসসিতে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু।
টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে এম.এ.মান্নান কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করেন। টঙ্গী কলেজ ছেড়ে পরে তিনি গাজীপুর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।
অধ্যাপক এম এ মান্নান ১৯৭৮ সালে অধ্যাপনা থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে (জাগদল) যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পন করেন। এই জাগদলই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে এম.এ.মান্নান তিনি দলের সদস্য থেকে শুরু করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মান্নান দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন।
অধ্যাপক মান্নান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে দলীয়ভাবে সালনা গ্রাম সরকার প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। পরে জাতীয় গ্রাম সরকারের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিবেরও দায়িত্বে ছিলেন। তবে, অধ্যাপক মান্নানের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক উত্থান শুরু।
অধ্যাপক মান্নান প্রথম ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে আরও পরপর চার বার তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
অধ্যাপক মান্নান ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে এম এ মান্নান দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে তৎকালীন সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। পরে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে, তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদন্বন্ধীতা করেন। তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন। তাকে নাশকতা, গাড়িপোড়ানোসহ প্রায় ৩০টি মিথ্যা মামলার আসামী করে গ্রেফতার ও নানাভাবে হয়রানী করা হয়। ২০১৫ সালে তাকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সিটি মেয়রের ৫ বছর মেয়াদকালে ২৮ মাস কারাগারে বিনাদোষে কারাগারে ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন মিথ্যা মামলার কারণে তিনি তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, হয়রানী ও কারাবাসের কারণে অধ্যাপক এম. এ. মান্নান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।